একাদশ শ্রেণির ইতিহাস বড় প্রশ্ন অধ্যায় 5 | পলিসের বৈশিষ্ট্য ও পতনের কারণ আলোচনা করো | Class 11 History big note
পলিসের বৈশিষ্ট্য ও পতনের কারণ আলোচনা করো?
উত্তরঃ- পলিস গ্রিক শব্দ ” polis ” এর অর্থ হল- নগর রাষ্ট্র । প্রাচীন গ্রিসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর গুলিকে পলিস বলা হত । আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম থেকে চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পলিস গুলির উদ্ভব ঘটে ।কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নগর রাষ্ট্র হল এথেন্স ,স্পার্টা , থিবস ও ইত্যাদি ।
পলিসের বৈশিষ্ট্য গুলি হলঃ-
আয়তানঃ- গ্রীক পলিস গুলির আয়তান ছিল ক্ষুদ্র । গ্রীসের বানিজ্য নগরী ” করিন্থ” এর আয়তন ছিল ৩৩০ বর্গমাইল ।
জনসংখ্যাঃ- পলিস গুলির জনসংখ্যা ছিল খুবই কম অতিক্ষুদ্র পলিশ গুলির জনসংখ্যা ছিল ১০ জন এবং আদর্শ পলিশের জনসংখ্যা ছিল ৫০০০ জন ।
শাসন কাঠামোঃ- বেশিরভাগ পলিস গুলির শাসন কাঠামো ছিল জনতান্ত্রিক । জনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পলিস গুলির শাসন কাঠামো পরিচালিত হত ।
অর্থনীতি ঃ- পলিস গুলির অরথনিতির মুল ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ । কৃষির পাশাপাশি ব্যবসা বানিজ্য ও শিল্পের প্রচলন ছিল ।
স্বাতন্ত্র্যঃ- পলিস গুলি একে অপরের থেকে স্বাধীন ছিল । প্রতিটি পলিসের নিজস্ব সরকার সেনাবাহিনী ও ক্যালেন্ডার থাকতো ।
পতনের কারনগুলিঃ- পলিসের পতনের কারন গুলি ছিল মুলত—
রাজনৈতিক সমস্যাঃ– গ্রিক পলিস গুলির জন্মকাল থেকে রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত ছিল । যার ফলে কোনদিন তারা রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি । তাই তাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি গতিহীন হয়ে পড়ে ।
যুদ্ধ বিগ্রহঃ- গ্রিক পলিসগুলিতে অবিরাম যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকত । যা সামগ্রিকভাবে তাদের পতন ডেকে আনে ।
নৌশক্তির অভাবঃ- আর্থিক দুর্বলতার কারণে পলিস গুলির নৌশক্তি ছিল ভিত্তিহীন ও দুর্বল । এছাড়া এথেন্স তার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে পলিস গুলির নৌশক্তি ধ্বংস করে ।
আর্থিক বৈষম্যঃ- পলিশ গুলিতে ধনী ও দরিদ্রের আর্থিক বৈষম্য অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল ।এবং এই বৈষম্য নীতি তাদের পতন ডেকে আনে ।
ম্যাসিডনের শ্রেষ্ঠত্বঃ- মাসিডন সামরিক ক্ষেত্রে দক্ষ ছিল এবং সৈন্য বাহিনী ছিল নতুন যুদ্ধ কৌশলে অভিজ্ঞ । ফলে তাঁরা সহজেই পলিস গুলিতে দখল করে নেয় । এছাড়াও উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য পলিসগুলির পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে ।
সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দাও ? মৌর্য সাম্রাজ্য ও মেসিডনের সাম্রাজ্যের তুলনা আলোচনা করো?
সাম্রাজ্যঃ- ইংরেজি ” Empire ” এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো সাম্রাজ্য । সুপ্রাচীনকাল থেকে সাম্রাজ্যর ধারণা বহুল প্রচলিত । সাম্রাজ্য বলতে ভূখণ্ড এবং রাজশক্তির ধারণা আমাদের মানস লোকে ফুটে ওঠে। অন্যভাবে বলা যায়—–
(i) রাজনৈতিক সামরিক ভিত্তিতে গঠিত নির্দিষ্ট ভূখণ্ডকে সাম্রাজ্য বলে। যেখানে জনসমষ্টি ও শাসক থাকে ।
(ii) যখন কোন ভূখণ্ড শাসক সম্রাট উপাধি ধারণ করে তখন তার অধীনস্থ রাষ্ট্রকে সাম্রাজ্য বলে।
উদাহরণঃ- আক্কাদ সাম্রাজ্য , গ্রীক সাম্রাজ্য ,রোমান সাম্রাজ্য , মৌর্য সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য ইত্যাদি ।
মৌর্য ও ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্যের তুলএরঃ- বিশ্বের সর্ববৃহৎ শক্তিশালী সাম্রাজ্য হলো ভারতের ”মৌর্য সাম্রাজ্য ” ও ইউরোপের ”ম্যাসিডনীয় সাম্রাজ্য” । নিম্নে উভয় সাম্রাজ্যের তুলনামূলক আলোচনা হল—
সাদৃশ্যঃ-
বৈসাদৃশ্যঃ-
পারস্যের ”ক্ষত্রপ” ও চীনের ”ম্যান্ডারিন” এর বিবরণ দাও?
উত্তরঃ- পারস্যের ক্ষত্রপ ব্যবস্থার পরিচয়ঃ- ক্ষত্রপ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ক্ষত্রিয় শব্দ থেকে যার অর্থ হলো প্রাচীন পারস্যের প্রদেশগুলোর শাসনকর্তা ।
গঠনঃ- প্রশাসনিক একক হিসাবে ক্ষত্রপ গুলি ছিল সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ । ব্যাকট্রিয় ,মিডিয়া , আইয়োনীয় অধ্যুষিত অঞ্চলের ক্ষত্রপ বাহিনী গড়ে ওঠে । এবং এই ক্ষত্রপপদ গুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হতো যথা– (i) কেন্দ্রীয় বৃহৎ ক্ষত্রপ (ii) কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র ক্ষত্রপ (iii) প্রাদেশিক ক্ষুদ্র ক্ষত্রপ।
কার্যাবলীঃ- ক্ষত্রপদের কার্যাবলী গুলি ছিল মূলত —-
(i) সামরিক দায়িত্বঃ- সৈনিক নিয়োগ , দুর্গ রক্ষণাবেক্ষণ ,সৈন চলাচলের জন্য পথ ঘাট নির্মাণ প্রভৃতি সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হতো ।
(ii) বিচারসংক্রান্ত দায়িত্বঃ- ক্ষত্রপরা ছিল প্রদেশগুলির সর্বোচ্চ বিচারক । তারা দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচার করতো ।
(iii) কর আদায়ঃ- ক্ষত্রপদের অন্যতম কাজ ছিল প্রদেশগুলি থেকে কর বা রাজস্ব আদায় করা।
(iv) আমলা নিয়্লাঃ- প্রদেশগুলোতে নানাবিধ কাজের জন্য ক্ষত্রপরা স্থায়ী কর্মচারী বা আমলা নিয়োগ করতো ।
(v) নিরাপত্তা দানঃ- ক্ষত্রপরা প্রদেশগুলিতে সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও দায়িত্ব পালন করত ।
ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার পরিচয়ঃ- পর্তুগিজ ”ম্যান্ডারিম” শব্দ থেকে ”ম্যান্ডারিন” শব্দের উৎপত্তি । ম্যান্ডারিন ছিল চীনের প্রতিভাধর সুদক্ষ কর্মচারী । চীনের মাঞ্ছ রাজবংশে সময় আমলা গোষ্ঠীর উদ্ভব হয় ।
নিয়োগঃ- প্রথমদিকে সম্রাটদের আত্মীয় পরিচিতিরা ম্যান্ডারিন পদে নিযুক্ত হত । পরবর্তীকালে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর প্রতিযোগিতা মুলক পরীক্ষার সূচনা হয় । প্রার্থীদের গুণমান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক অঞ্চলে নিয়োগ করা হতো ।
কার্যাবলী ও গুরুত্বঃ- ম্যান্ডারিনদের কার্যাবলী ও গুরুত্বের দিক গুলি হল ——
(i) কঠোর পরিশ্রমঃ- চীনের শিক্ষিত সৎ সুদক্ষ ম্যান্ডারিনদের কঠোর পরিশ্রম করতে হতো ।
(ii) সম্রাটকে সহায়তাঃ- সম্রাটকে প্রশাসনিক কাজে পরামর্শ প্রদান ও অন্যান্য বিষয়ে সহায়তা প্রদান ছিল উচ্চপদস্থ ম্যান্ডারিনদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
(iii) যোগ সূত্র রক্ষাকারইঃ- মেন্ডারিনরা ছিল চীনা সম্রাটদের নিয়ম-নীতির সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসকদের যোগসূত্র রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করতো ।
(iv) শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাঃ- মধ্য ও নিম্ন পদস্থ্য ম্যান্ডারিনরা প্রদেশ বা স্থানীয় অঞ্চলগুলিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করত ।
(v) নিরাপত্তা দানঃ- ম্যান্ডারিনরা শাসনভার গ্রহণ করে বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করে চীনকে সুরক্ষা প্রদান করত ।
মূল্যায়নঃ- চিনা প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ম্যান্ডারিন গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি । ১৯১১সালে কিং রাজবংশের পতন এর সঙ্গে ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ পতন ঘটে এবং আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ।