১. রাজপুত জাতির উৎপত্তি এবং ভারতীয় জাতীয় জীবনে তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ-
রাজপুত জাতিঃ- প্রাচীন ভারতের জাতির ব্যবস্থায় যে সকল জাতির উদ্ভব ঘটে তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল রাজপুত জাতি । হর্ষবর্ধনের পরবর্তীকালে উত্তর ভারতের রাজপুত জাতির উত্থান পর্ব শুরু হয় । ৭১২ থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ভারতীয় ইতিহাসে রাজপুত যুগ বলা হয় ।
উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদঃ- হর্ষবর্ধনের সভাকবি বানভট্টের মতে– উচ্চবংশীয় ক্ষত্রিয় সন্তানরাই রাজপুত নামে পরিচিত । তিনি রাজপুতদের ”চন্দ্রবংশীয়” ও ”সূর্যবংশীয়’ বলে দাবি করেছেন ।
অগ্নিকুল তত্ত্বঃ- কবি চাঁদ বরদাই ও পৃথ্বীরাজরাসো বলেছেন — বশিষ্ঠমুনির প্রার্থনা ফল হিসেবে ঘঞ্জের গঅগ্নিকুণ্ড থেকে রাজপুর গোষ্ঠীর যেমন (চৌহান, পারমার, চালুক্য, প্রতিহার) উদ্ভব হয় । অগ্নিকুল তত্ত্ব নামে পরিচিত এই মতটি আধুনিক ঐতিহাসিকরা অস্বীকার করেছেন ।
আর্যজাতি তত্ত্বঃ- পন্ডিত গৌরীশংকরহীরাচাঁদ এর মতে রাজপূত্ররা হলো খাঁটি আর্যজাতির সন্তান প্রচলিত কিংবদন্তি-র উপর ভিত্তি করে তিনি রাজপুতদের সূর্য ও চন্দ্র বংশীয় বলে দাবি করেছেন ।
বৈদেশিক জাতির বংশধরঃ- ঐতিহাসিক, ক্রুক, ভান্ডারকর প্রমুখেরা মনে করেন — শক, হুন , কুশান প্রভৃতি যোদ্ধা জাতির মানুষ ভারতে অনুপ্রবেশ করার ফলেই রাজপুত জাতির উদ্ভব হয়েছে ।
মিশ্র জাতিঃ- ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ রাজপুতদের একটি মিশ্র জাতি বলে উল্লেখ করেছেন । তার মতে বহিরাগত শক হুন ও কুশানদের সঙ্গে ভারতীয় মিলন ও মিশ্রণ হওয়ার ফলেই রাজপুত জাতির উদ্ভব ঘটেছে ।
ভারতীয় জাতীয় জীবনে রাজপুত জাতির অবদানঃ- ভারতের জাতীয় জীবনে রাজপুত জাতির অবদান অনস্বীকার্য । অবদানের দিক গুলি হল যথাক্রমে—-
(ক) সংগ্রামী মনোভাবঃ- যোদ্ধা জাতি হিসেবে রাজপুত্রদের দেশের স্বাধীনতার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম সযবীর্য, সংগ্রামি মনোভাব প্রভৃতি ভারত ইতিহাসে তাদের চিরস্মরণীয় করে রেখেছে ।
(খ) দৃঢ়মানসিকতাঃ- রাজপুত জাতির মানসিকত দৃঢ়তা ভারত ইতিহাসে তাদের অমর করে রেখেছে । নারীর মর্যাদা রক্ষা, আশ্রয়দান , স্বহৃদয় ব্যবহার তাদের চারিত্রিক গুণাবলির মধ্য পড়ে রাজপুত রমণীরা সংগ্রামী মনোভাবের জন্য ভারত ইতিহাসে অমর হয়ে আছে ।
কৃষি উন্নতঃ- রাজপুত শাসকদের প্রচেষ্টায় সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য বহুখাল, বৃষ্টির জল ধরে রেখে কৃষি কাজে ব্যবহার , কৃষির উন্নতি করেছিল ।